Wednesday, 19 February 2020

কাসেমের যুদ্ধযাত্রা



Kv‡m‡gi hy×hvÎv

                   -gxi gkviid †nv‡mb

সূর্যদেব যতই ঊর্ধ্বে উঠিতেছেন, তাপাংশ ততই বৃদ্ধি হইতেছে। হোসানের পরিজনেরা বিন্দুমাত্র জলের জন্য লালায়িত হইতেছেন, শত শত বীরপুরুষ শত্রæহস্তে প্রাণত্যাগ করিতেছে। ভ্রাতা, পুত্র, স্বামীর শোণিতাক্ত কলেবর দেখিয়া কামিনীরা সময়ে সময়ে পিপাসায় কাতর হইতেছে; চক্ষুতে জলের নামমাত্রও নাই, সেই যেন একপ্রকার বিকৃত ভাব, কাঁদিবার বেশি শক্তি নাই। হোসেন চতুর্দিক চাহিয়া দেখিলেন, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে আর কেহই নাই। রণসজ্জায় সজ্জিত হইয়া জয়লাভের জন্য শত্রæসম্মুখীন হইতে আদেশের অপেক্ষায় তাঁহার সম্মুখে আজ কেহই আসিতেছে না। হোসেন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন,”হায়! একপাত্র বারি প্রত্যাশায় এত আতœীয় বন্ধুবান্ধব হারাইলাম, তথাচ পরিবারগণের পিপাসা নিবারণ করিতে পারিলাম না। কারবালাভূমিতে রক্ত¯্রােত বহিতেছে, তথাচ ¯্রােতস্বতী ফোরাত শত্রæহস্ত হইতে উদ্ধার করিতে পারিলাম না। এক্ষণে আর বাঁচিবার ভরসা নাই, আকাক্সক্ষাও নাই।”হাসান-পুত্র কাসেম পিতৃব্যের এই কথা শুনিয়া সুসজ্জিত বেশ সম্মুখে করজোড়ে দন্ডায়মান হইয়া বিনীতভাবে বলিতে লাগিলেন, ”তাত, কাসেম এখনো জীবিত আছে। আপনার আজ্ঞাবহ চিরদাস আপনার সম্মুুখে দন্ডায়মান আছে। অনুমতি করুন, শত্রæকুল নির্মুল করি।”হোসেন বলিলেন, ”কাসেম, তুমি পিতৃহীন, তোমার মাতার তুমিই একমাত্র সন্তান; তোমায় এই ভয়ানক শত্রæদলমধ্যে কোন প্রাণে পাঠাইব?”কাসেম বলিলেন, ”ভয়ানক! আপনি কাহাকে ভায়ানক শত্রæ জ্ঞান করেন? পথের ক্ষুদ্র মক্ষিকা, পথের ক্ষুদ্র পিপীলিকাকে আমি যেমন ক্ষুদ্র জ্ঞান করি, আপনার অনুমতি পাইলে এজিদের ভয়ংকর ভয়ংকর সৈন্যাধ্যক্ষগণকে সেইরূপ তৃণজ্ঞান করিতে পারি। কাসেম যদি বিপক্ষে ভয়ে ভয়ার্তচিত্ত হয়, হাসানের নাম ডুবিবে, আপরার নামও ডুবিবে। অনুমতি করুন, একা আমি সশস্ত্র হইয়া সহ¯্র সহ¯্র লক্ষ লক্ষ রিপুবিনাশে সমর্থ।”হোসেন বলিলেন, ”প্রাণধিক! আমার বংশে তুমি সকলের প্রধান, তুমি ইমাম বংশের বহুমূল্য রতœ, তুমি পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র, তুমি সৈয়দ বংশের অমূল্যনিধি! তুমি তো তোমার মাতার একমাত্র সন্তান, তাঁহার সম্মুখে থাকিয়া তাঁহাকে এবং সমুদয় পরিজনকে সান্ত¦না কর। আমি নিজেই যুদ্ধ করিয়া ফোরাতকূল উদ্ধার করিতেছি।”কাসেম বলিলেন, ”আপনি যাহাই বলুন, কাসেমের প্রাণ দেহে থাকিতে আপনার অস্ত্রধারণ করিতে হইবে না। কাসেম এজিদের সৈন্য দেখিয়া কখনোই ভীত হইবে না। যদি ফোরাতকুল উদ্ধার করিতে না পারি, তবে ফোরাতনদী আজ লোহিতবর্ণে রঞ্জিত হইয়া ইজিদের সৈন্যশোণিতে যোগ দিয়া মহাসমুদ্রে প্রবাহিত হইবে।”

হোসের বলিলেন, ”বৎস! আমার মুখে এ কথার উত্তর নাই। তোমার মাতার আদেশ লইয়া যাহা ইচ্ছা তাহাই কর।”হাসেনেবানুর পদধুলি গ্রাহণ করিয়া মহবীর কাসেম যুদ্ধযাত্রা প্রার্থনা জানাইলে হাসানেবানু কাসেমের মস্তক চুম্বন করিয়া আশীবর্চন প্রয়োগপূর্বক বলিলেন, ”যাও, বাছা, যুদ্ধে যাও। তোমার পিতৃঋণ পরিশোধ রক্ষা কর। এজিদের সৈন্যগণের মস্তক চূর্ণ কর, যদ্ধে জয়ী হইয়া ফোরাতকূল উদ্ধার কর, তোমার পিতৃব্যকে রক্ষা কর। তোমার আর ভ্রাতা-ভাগ্নীগণ তোমারই মুখাপেক্ষা করিয়া রহিল। যাও বাপ, তোমায় আজ ঈশ্বরের পদতলে সমর্পণ করিলাম।”হাসনেবানুর নিকট হইতে বিদায় লইয়া পিতৃব্যের পদচুম্বনপূর্বক কাসেম অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিবেন, এমন সময় হোসেন বলিলেন, ”কাসেম, একটু বিলম্ব কর।” অনুজ্ঞা শ্রবণমাত্র অশ্ববন্ডা ছাড়িয়া কাসেম তৎক্ষণাৎ পিতৃব্যসম্মুখে দন্ডায়মান হইলেন। হোসেন বলিতে লাগিলেন, ”কসেম, তোমার পিতার নিকট আমি এক প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ আছি, আমাকে সেই প্রতিজ্ঞা হইতে উদ্ধার করিয়া যুদ্ধে গমন কর। যুদ্ধে যাইতে আমার কোনো আপত্তি নাই। তোমার পিতা প্রাণবিয়োগের কিছু পূর্বে আমাকে করারে আবদ্ধ করিয়া গিয়েছেন, আমর কন্যা সখিনার সহিত তোমরা বিবাহ দিব। তুমি সখিনাকে বিবাহ না করিয়া যুদ্ধে যাইতে পারিবে না। তোমার পিতার আজ্ঞা প্রতিপালন কর, আমাকেও প্রতিজ্ঞা হইতে রক্ষা করা,- উভয়ই তোমার সমতুল্য কার্য।”কাসেম মহাবিপদে পড়িলেন। এতাদৃশ মহাবিপদ সময়ে বিবাহ করিতে হইবে, ইহা ভাবিয়াই তিনি অস্থিরচিত্ত কী করেন, কোন উত্তর না করিয়া মাতার নিকটে সমুদয় বৃত্তান্ত বলিলেন।হাসনেবানু বলিলেন, ”কাসেম! আমিও জানি, আমার সম্মুখে তোমার পিতা তোমর পিতৃব্যের নিকট এই বিবাহের প্রস্তাব করিয়া তাঁহাকে করারে আবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। শোকে, তাপ এবং উপস্থিত বিপদে আমি সমুদয় ভুলিয়া গিয়াছি। ঈশ্বরানুগ্রহে তোমার পিতৃব্যের স্মরণ ছিল বলিয়াই তোমার পিতার উপদেশ প্রতিপালিত হইবে বোধ হইতেছে। ইহাতে আর কোনো আপত্তি উত্থাপন করিও না। এখনই বিবাহ হউক। প্রাণধিক! এই বিষাদ-সমুদ্রমধ্যে ক্ষণকালের জন্য একবার আনন্দ¯্রােত বাহিয়া যাউক।”কাসেম বলিলেন, ”জননী! পিতা মৃত্যুকালে আমাকে একখানি কবচ দিয়া বলিয়া গিয়াছেন যে, যে সময় তুমি কোনো বিপদে পড়িবে, নিজে বুদ্ধির দ্বারা যখন কিছুই উপায় স্থির করিতে না পারিবে, সেই সময় এই কবচের অপর পৃষ্ঠা দেখিয়া তদুপদেশমতো কার্য করিও। আমার দক্ষিণ হস্তে যে কবচ দেখিতেছেন, ইহাই সেই কবচ। আপনি যদি অনুমতি করেন, তবে অপর পৃষ্ঠা পাঠ করিয়া দেখি কী লেখা আছে!”ঘাসনেবানু বলিলেন, ”এখনই দেখ! তোমার আজিকার বিপদের ন্যায় আর কোনো বিপদই হইবে না। কবচের অপর পৃষ্ঠে দেখিবার উপযুক্ত সময়ই এই।” এই কথা বলিয়াই হাসনেবানু কাসেমের হস্ত হইতে কবচ খুলিয়া কাসেমের হস্তে দিলেন। কাসেম সম্মানের সহিত কবচ চুম্বন করিয়া অপর পৃষ্ঠে দেখিয়াই বলিলেন, ”মা! আমার কোনো আপত্তি নাই। এই দেখুন , কবচে কী লেখা আছে। পরিজনেরা সকলেই দেখিলেন, কবচে লেখা আছে,” এখনই সখিনাকে বিবাহ কর।” কাসেম বলিলেন, ”আর আমরা কোনো আপত্তি নাই। এই বেশেই বিবাহ করিয়া পিতার আজ্ঞা পালন ও পিতৃব্যের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিব।”হাসনেবানু বলিয়াছেন, ”বিষাদ-সমুদ্রে আনন্দ¯্রােত!” যে শিবিরে স্ত্রী-পুরুষেরা, বালক-বালিকারা দিবারাত্রি মাথা ফাটাইয়া ক্রন্দন করিতেছে, পুত্রমিত্রশোকে জড়ৎসংসার অন্ধকার দেখিতেছে, প্রাণপতির চিরবিরহে সতী নারীর প্রাণ ফাটিয়া যাইতেছে, ভ্রাতার বিয়োগযন্ত্রণায় অধীর হইয়া প্রিয় ভ্রাতা বক্ষ বিদারণ করিতেছে, শোকে-তাপে স্ত্রী-পুরুষ একত্রে দিবানিশি ’হায় হায়’ রবে কাঁদিতেছে, জগৎকেও কাঁদাইতেছে;আবার মুহুর্ত পরেই পিপাসা, সেই পিপাসারও শান্তি হইল না; সেই শিবিরেই আজ বিবাহ!কাহারো মুখে হাসি নাই, কাহারো মুখে সন্তোষের চিহ্ন নাই; বিবাহ, অথচ বিষাদ! পুরবাসীগণ সখিনাকে ঘিরিয়া বসিলেন। রণবাদ্য তখন সাদিয়ানা বাদ্যের কার্য করিতে লগিল। অঙ্গরাগদি সুগন্ধি দ্রব্যের কথা কাহারো স্মরণ হইল না; কেবল কষ্টবিনির্গত নেত্রজলেই সখিনার অঙ্গ ধৌত করিয়া পুরবাসিনীর পরিষ্কৃত বসনে সখিনাকে সজ্জিত করিলেন। কেশগুচ্ছ পরিপাটি করিয়া বাঁধিয়া দিলেন সভ্যদেশ প্রচলিত বিবাহের চিহ্নস্বরূপ দুই-একখানি অলংকার সখিনার অঙ্গে ধারণ করাইলেন। সখিনা পূর্ণবয়ষ্কা, সকলই বুঝিতেছেন। কাসেম অপারিচিত নহেন। প্রণয় ভালোবাসা, উভয়েরই রহিয়াছে! ভ্রাতা-ভাগ্নীমধ্যে যেরূপ বিশুদ্ধ ও পবিত্র প্রণয় হইয়া থাকে, তাহা কাসেম ও সখিনার বাল্যকাল হইতেই রহিয়াছে। কাহারো স্বভাব কাহারো অজানা নাই, বাল্যকাল হইতেই এই উপস্থিত যৌবনকাল পর্যন্ত একত্র ক্রীড়া, একত্র বাস নিবন্ধন উভয়েরই মনে সবিশেষ সরল প্রনয় জন্মিায়াছে। উভয়েই এক পরিবার, এক বংশোদ্ভুত, উভয়ের পিতা পরষ্পর সহোদর ভ্রাতা, সুতরাং লজ্জা, মান, অভিমান অপর স্বামী-স্ত্রীতে যেরূপ হইবার সম্ভাবনা, তাহা উহাদের নাই। লগ্ন সুস্থির হইল। ওদিকে এজিদের সৈন্যমধ্যে ঘোর রবে যুদ্ধবাজনা বাজিতে লাগিল। ফোরাত নদীর কুলে উদ্ধার করিতে আর কোনো বীরপুরুষই হোসেনের পক্ষ হইতে আসিতেছে না দেখিয়া আজিকার যুদ্ধে জয় সম্ভব বিবেচনায় তুমুল শব্দে বাজনা বাজিতে লাগিল। সেই শব্দে ফোরাতকূল হইতে কারবালার অন্তঃসীমা পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। হোসেনের শিবির পতিপুত্রশোকাতুরা অবলাগণের কাতর নিনাদে সপ্ততল আকশ ভেদ করিতে লাগিল। সেই কাতরধ্বনি ঈশ্বরের সিংহাসন পর্যন্ত যাইতে লাগিল। হোসেন বাধ্য হইয়া এই নিদারুণ দুঃখের সময় কাসেমের হস্তে প্রাণধিকা দুহিতা সখিনাকে সমর্পণ করিলেন। বিধিমতো বিবাহকর্য সম্পন্ন হইল। শুভকার্যের পর অনন্দাশ্রু অনেকের চক্ষে দেখা যায়, কিন্তু হোসেনের শিবিরস্থ পরিজনগণের চক্ষে কোনো প্রকার অশ্রæই দেখা যায় নাই। বর-কন্যা উভয়েই সমবয়ষ্ক। স্বামী-স্ত্রীতে দুই দন্ডে নির্জনে কথাবার্তা কহিতেও আর সময় হইল না। বিবাহকর্য সম্পন্ন করিয়াই গুরুজনগণের চরণ বন্দনা করিয়া মাহাবীর কাসেম অসিহস্তে দন্ডায়মান হইয়া বলিলেন, ”এখন কাসেম শত্রæ নিপাতে চলিল।”হাসনেবানু কাসেমের মুখে শত শত চুম্বন দিয়া আর সকলের সহিত দুই হস্ত তুলিয়া ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিলেন,” হে করুণাময় জগদীশ্বর! কাসেমকে রক্ষা করিও। আজ কাসেম বিবাহসজ্জা, বাসরসজ্জা পরিত্যাগ করিয়া চিরশত্রæ সৈন্য সম্মুখে যুদ্ধসজ্জায় চলিল। পরমেশ্বর! তুমিই রক্ষাকর্তা; তুমিই রণক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষক হইয়া পিতৃহীন কাসেমকে এ বিপদে রক্ষা কর!”কাসেম যাইতে অগ্রসর হইলেন; হাসনেবানু বলিতে লাগিলেন, ”কাসেম,একটু অপেক্ষা কর। চিরমনসাধ আমি পূর্ণ করি। তোমাদের দুই জনকে একত্রে নির্জনে বসাইয়া আমি একটু দেখিয়া লই। উভয়কে একত্রে দেখিতে আমার নিতান্তই সাধ হইয়াছে।” এই বলিয়া সখিনা ও কাসেমকে বাস্ত্রাবাসমধ্যে একত্র বসাইয়া বলিলেন,”কাসেম, তোমার স্ত্রীর নিকট হইতে বিদায় লও।” হাসনেবানু শিরে করাঘাত করিতে করিতে তথা হইতে বাহির হইয়া কাসেমের গম্য পথে দাঁড়াইয়া আছেন। কাহারো মুখে কোনো কথা নাই। কেবল সখিনার মুখপানে চাহিয়া কাসেম স্থীরভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন। অনেকক্ষণ পরে কাসেম বলিলেন,” সখিনা! প্রণয়-পরিচয়ের ভিখারি আমরা নহি; এক্ষণে নুতন সম্বন্ধে পূর্বের প্রণয় নুতনভাবে আজীবনকাল পর্যন্ত সমভাবে রক্ষার জন্যই বিধাতা এই নুতন সম্বন্ধ সৃষ্টি করাইলেন। তুমি বীরকন্যা,বীরজায়া; এ সময়ে তোমার মৌনী হইয়া থাকা আমার অধিকতর দুঃখের কারণ। পবিত্র প্রণয় তো পূর্ব হইতে ছিল, এক্ষণে তাহার উপরে পরিণায়সূত্রে বন্ধন হইল, আর আশা কী? অস্থায়ী জগতে আর কী সুখ বল তো?”সখিনা বলিলেন,”কাসেম,তুমি আমাকে প্রবোধ দিতে পারিবে না। তবে এইমাত্র বলি, যেখানে শত্রæর নাম নাই এজিদের ভায় নাই, কারবালা প্রান্তর নাই, ফোরাতজলের পিপাসাও নাই, সেই স্থানে আমি যেন তোমাকে পাই; এই আমার প্রার্থনা প্রণয় ছিল, পরিণয় হইল, আর কী আশা?”-কাসেমর হস্ত ধরিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে সখিনা পুনঃপুনঃ বলিলেন,”কাসেম! প্ররিণয় হইল, আর কী আশা!”প্রিয়তমা ভার্যাকে অতি ¯েœহসহকারে আলিঙ্গন করিয়া মুখের নিকটে মুখ রখিয়া কাসেম বলিতে লাগিলেন, ”আমি যুদ্ধযাত্রী, শত্রæশোণিতপিপাসু; আজ সপ্ত দিবস একবিন্দুমাত্র জল গ্রহণ করি নাই, কিন্তু এখন আমার ক্ষুদা-পিপাসা কিছুই নাই। তবে যে পিপাসায় কাতর হইয়া চলিলাম, বোধহয় এ জীবনে তাহার তৃপ্তি নাই, হইবেও না। তুমি কাঁদিও না, মনের আনন্দে আমাকে বিদায় কর। একবার কান পাতিয়া শোন দেখি, শত্রæদলের রণবাদ্য কেমন ঘোর রবে বাদিত হইতেছে। তোমার স্বামী, মহাবীর হাসানের পুত্র, হজরত আলীর পৌত্র কাসেম তোমার স্বামী, এই কাসেম কি ঐ বাদ্য শুনিয়া নববিবাহিতা স্ত্রীর মুখপানে চাহিয়া থাকিতে পারে? সখিনা! আমি এক্ষণে বিদায় হই।”সখিনা বলিতে লাগিলেন,”তোমাকে ঈশ্বরে সঁপিলাম। যাও কাসেম-যুদ্ধে যাও! প্রথম মিলনরজনীর সমাগম আশয়ে অস্তমিত সূর্যের মলিন ভাব দেখিয়া প্রফুল্ল হওয়া সখিনার ভাগ্যে নাই। যাও কাসেম!-যুুদ্ধে যাও!”কাসেম আর সখিনার মুখের দিকে তাকাইতে পারিলেন না। আয়তলোচনে বিষাদিতভাবে চক্ষে দেখিতে আর ক্ষমতা হইল না। কোমলপ্রাণা সখিনার সুকোমল হস্ত ধরিয়া বারংবার চুম্বন করিয়া বিদায় হইলেন। সখিনার আশা-ভরসা যে মুহুর্তে অঙ্কুরিত হইল, সেই মুহুর্তেই শুকাইয়া গেল। কাসেম দ্রæতপদে শিবির হইতে বাহির হইয়া এক লম্ফে অশ্বে আরোহণ পূর্বক সাজোরে অশ্বপৃষ্ঠে কশাঘাত করিলেন। অশ্ব বায়ুবেগে দৌড়াইয়া চলিল।


0 comments:

Post a Comment